৮৯ ৪ খা, এ পতি টিপা
বাঁগবাজার বীডিং লাইব্রেরী
জ্ঞান্্রিখখ ন্নিঙেক্গ্ক্ স্পভ্ঞ বা... পোপ
পনের দিনেব মধ্যে বইখানি ফেব দিতে হবে।
ূ গ্রদানেব 1 গ্রহণের তারিথ | তাঁবিখ
প্রদানের গুহণেব র তাবিথ | তাবিথ |
পপি পাপা জল ্পললাীপপপীপিপিপিশদ
সে১4 ূ ৬ 1১) 1 % ৮ ৰ
পঞ্রোন্ক
ৃ ূ ৃ ৃ
সস ্ ২০৬ ্ দু
রণ
পুজ্যপাঁঘ শ্রীমন্মহধি দেবেক্দ্র নাথ ঠাকুরের
স্বরচিত, জীবন-চরিত ।
পরিশিষ্ট ।
০০-৯০-
শ্রীপ্রিয় নাথ শাস্ত্রী কর্তৃক প্রকাশিত ।
১৯৬ ছক্কু খানসামাব লেন, কলিকাত।।
৫8118110: 1 বণ 1১1) 03 এ বি 73490 ৮72 ৫ 90) 84107801712 75193 319) (0150 10214172815 10221 13041,
859
4৫127101169 ?০১০।9৫. ] | মুল্য ১॥* টাকা ।
স্বরচিত জীবন-চরিতের ১০৩ পৃষ্ঠাতে এই যে লিখিত আঁছে, *উপনিষদে আছে যে, যাহার গ্রামে থাকিয়া যাগ যজ্ঞ প্রভৃতি বর্শু কাণ্ডের অনুষ্ঠান করে তাহারা মৃত্যুর পরে ধূমকে প্রাপ্ত হয়” ইত্যাদি তাহার শ্রুতিপ্রমাণ এই--
“অথ য ইমে গ্রাম ইস্টাপুর্তে দত্তমিত্যুপাসতে তে ধূমমভি সম্ভবতি ধুমাদ্রাত্রিং রাত্রেরপরপক্ষমপরপক্ষাদ্যান্ ষড়দক্ষিণৈতি মাসাংস্তানৈতে সম্বসরমভিপ্রাপ্ধুবন্তি। ৩॥ মাসেভ্যঃ পিতৃলোকং পিতৃলোকাদাঁকাশমাকাশাচ্চন্দ্রমসমেষ সোঁমো রাজা তদোবানামন্ং তং দেবা ভক্ষয়ন্তি। ৪॥ তশ্মিন্ যাবৎ .সম্পাতমুযিত্বাহখৈতমধ্বানং পুননিবর্তৃন্তে যখেতমাকাশমাকাশাদায়ুং বায়ুভূত্বা ধূমে! ভবতি ধুম ভূত্বাহভ্রং ভবতি অভ্রং ভূত্বা মেঘে ভবতি মেঘে ভূত্বা প্রবর্ষতি ত ইহ ত্রীহি যব! ওষধি বনস্পতযস্তিলমাঁষা ইতি জায়স্তেহতো বৈ খলু দুনিশ্রপতরং যো৷ যো হ্থন্নমন্তি যো রেতঃ সিঞ্চতি তনু এব ভবতি” ॥ ৬ ॥ | |
ছান্দোগ্যোপিনিষ।
৫ প্রপাঠক।
পৃষ্ঠ!
১৬.
১৬
9.
ওদ্ধিপত্র |
পংক্তি অশুদ্ধ ৩ স্বরণ ৮ পুক্ষরিনীর ১৫ সতে সতে
ওদ। স্মরণ পুফরিণার
সতে
ভূমিকা ।
পৃজ্যপাদ শ্রীমন্মহষি দেবেন্দ্র নাথ ঠাকুরের স্বরচিত জীবন-চরিত প্রকাশিত হইল । ইহাতে তাহার বাল্যেই ধন্মান্ুরাগ, তীহার বৈরাগ্য, উপনিষদ শিক্ষা, ব্রাহ্মসমাঁজে যোগ ও সমাজ গঠন, ব্রাঙ্গ- ধশ্মের বীজ ও ব্রান্মধন্ম-গ্রন্থ প্রণয়ণ, সাধন, পরলোক ও মুক্তি এবং শিমল! ভ্রমণাদি অনেক বিষয়ের নিগুঢ় তত্ব বর্ণিত হইয়াছে । কিন্তু ইহাই তাহার পরিপুর্ণ জীবন-চরিত নহে। তাহার জীবন-চরিত, অগাধ ও অসাধারণ। . আমার সহিত তাহার বহু দিনের ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল । ১৮০১ শক হইতে তাহার শিষ্যত্ব ও পরিচর্যা করিয়! তাহার জীবন বৃত্তান্ত যতদূর বুঝিতে পারিয়াছি তাহ৷ গ্রন্থ শেষে পরিশিষ্টে আমি বর্ণন করিলাম । মধ্য কালের বৃত্বাস্ত যাহ! অব-. শিষ্ট রহিল তাহা তীহার মুখে যতদূর শুনিয়াছি ও অনুসন্ধান করিয়া প্রাপ্ত হইতেছি তাহ! ইহার দ্বিতীয় সংস্করণে প্রকাশ করিয়! পাঠকগণকে প্রদান করিবার ইচ্ছা রহিল। প্রার্থনা করি যে ঈশ্বরের কৃপ। আমার এই ইচ্ছার উপরে অবতীণ হউক ।
্ীপ্রিয় নাথ শাস্ত্রী ।
গ্রন্থ-্বত্বাধিকার।
শ্রেহাস্পদ শ্রীমান্ প্রিয় নাথ !
১৮ বৎসর হইতে ৪১ বৎসর বরঃক্রম পর্যযস্ত আমার জীন" কাহিনী উনচল্লিশ পরিচ্ছেদে সমাপ্ত করিয়া তোমাকে দিলাম ; ইহা তোমার সম্পর্তি হইল। ইহাতে কোন নুতন শব্দ যোগ করিবে না, ইহার বিন্দ্রু বিসর্গও পরিত্যাগ করিবে না। আমি এই পৃথিবীতে জীবিত থাকিতে ইহা মুদ্রিত করিয়া প্রকাশ করিবে না, তোমার প্রতি আমার এই আদেশ, ইহা সর্বতোভাবে পালন করিবে । তোমার মঙ্গল হউক । ইতি ১১ই মাঘ ১৮৯৬ শক।
পুনশ্চ-_ ইহার ইংরাঁজী অনুবাদের অধিকার শ্রীমান্ সত্যেন্দ্র নাথ ও শ্রীমান্ রবীন্দ্র নাথকে দিলাম । অন্যান্য ভাষায় অনুবাদের অধিকার তোমারই রহিল। ইতি ১১ই মাঘ ১৮১৬ শক।
শ্রীদেবেন্দ্র নাথ ঠাকুর ।
তু হী ২1৭
প্রথম পরিচ্ছেদ ।
দিদ্রিমা % আমাকে বড় ভাল বাসিতেন। শৈশবে তাহাকে ব্যতীত আমিও আর কাহাকে জানিতাম না। আমার শয়ন, পবেশন, ভোজন, সকলই তাহার নিকট হইত । তিনি কালীথাটে [াইতেন, আমি তাহার সহিত ঘাইতাম। তিনি খন আমাকে ফেলে ্বগন্নাথক্ষেত্রে ও বুন্দাবনে গির়াছিলেন, তখন আমি বড়ই কীপ্দিতাম। ধন্মে তাহার অত্যন্ত নিষ্ঠা ছিল। তিনি প্রতিদিন অতি প্রত্যুষে গঙ্গাস্নান করিতেন । এবং প্রতিদিন শীলগ্রামের জন্য স্বহস্তে টষ্পের মাল! গাখিয়া দিতেন। কখনো কখনে। তিনি সংকল্প করিয়। টদয়াস্ত সাধন করিতেন-_সুধ্যোদয় হইতে সুধ্যের অন্তকাল পর্য্যন্ত [ধ্যকে অর্ধ্য দিতেন । আমিও ০১ য়ে ছাতের উপরে রৌদ্রেতে হার সঙ্গে সঙ্গে থাকিতাম ।॥ এবং সেই সুধ্য অধ্যের মন্ত্র শুনিয়! "যা আমার অভ্যাস হইয়া গেল ।ধ্ধজবাকুস্থম সঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং তিং। ধ্বান্তারিং সর্ববপাঁপন্বং প্রণতোহস্মি দিবাকরং”। দিদিমা
৪ দ্রিন হরিবাঁসর করিতেন, সমস্ত রাত্রে কথা হইত এবং বহইত; তাহার শব্দে আমরা আর রাত্রিতে ঘুমাইতে পারি-
। তিনি সংসারের সমস্ত তত্বাবধারণ করিতেন এবং স্বহস্তে
্্য করিতেন। তাহার কাধ্যদক্ষতার জন্য তাহার শাসনে
সকল বাধ্য সুশৃঙ্খলরূপে চলিত। পরে সকলের আহারান্তে
_ আমার পিতামহী। মা
ও
তিনি স্বপাকে আহার করিতেন । আমিও তাহার হবিন্যলেজ। ভাঁগী ছিলাম । তাহার সেই প্রসাদ আমার যেমন স্বাদ লাগিত,
তেমন আপনার খাওয়া ভাল লাগিত না। তীহার শরীর যেষন সুন্দর ছিল, কাধ্যেতে তেমনি তাহার পটুতা ছিল, এবং ধন্মেতেও তাহার তেমনি আস্থা ছিল। কিন্তু তিনি মা-গোসাইয়ের সতত যাঁতারাত বড় সহিতে পাঁরিতেন না। তাহার ধর্ম্মের ভন্ধ বিশ্বাসের সহিত একটু স্বাধীনতাও ছিল। - আগি তীহার সহিত আমাদের পুরাতন বাড়ীতে গোপীনাথ ঠাকুর দর্শনার্থে বাইতাম। কিন্তু জমি তাহাকে ছাড়িয়। বাহিরে আসিতে ভাল বাসিতাম না। তাহার ক্রোড়ে বসিয়া গবাক্ষ দিয়া শান্ত-ভাবে সমজ্ত দেখিতাম। এখন আমার দিদিমা আর নাই । কিন্তু, কতদিন পন্ধে, কত অন্বেষণের পরে, আমি এখন আমার দিদিমার দিদিমাকে পাইয়াছি ও তাহার ক্রোড়ে বসিয়। জগতের লীল! দেখিতেছি। দিদিম। মৃত্যুর কিছুদিন পুর্বেব আমাকে বলেন, আমার যা কিছু আছে আম তাহা আ
কাহাঁকেও দিব না, তোমাকেই দ্িব। পরে তান তাহার বাঁকে চাঁবিটা আমাকে দেন। আমি তাহার বাক্স খুলিয়। কতকগুলি
টাকা ও মোহর পাইলাম, লোককে বলিলাম যে, আমি মুড়ি যুডকি পাইয়াছি। ১৭৫৭ শকে দিদিমার যখন ম্ৃভ্যুকাল উপস্থিত, তখন আমার পিত। এলাহাবাঁদ অঞ্চলে পধ্যটন করিতে গিয়াছিলেন, বৈদ্য আসিয়া কহিল রোগীকে ২. খুছে রাখা হইবে না। অতএব সকলে আমার পিতামহীকে গল্জাত।৬, ইয়া যাঁইবার জন্য বাড়ীর বাহিরে আনিল। 1কন্তু 1দ,এমা আরও বাঁচিতে চাঁন, গঙ্গায় বাইতে তাহার মত নাই । তিনি বলিলেন যে “যচ্টি দ্ব নকাঁনাথ বাড়ীতে থাকিত, ৎ ৰ তোর! কখনই আমাকে লইয়। -উতে পারতিস্ নে 1৮ কিন্তু লোকে তাহা শুনিল না। তাহাকে লইয়া গঙ্গাতীরে চলিল তখন তিনি কহিলেন, “তোরা যেমন "আমার কথা না শুনে আমীছে
| ৩ ]
গঙ্গায় নিয়ে গেলি, তেমনি আঁমি তোরদের সকলকে খুব কষ্ট দিব, আমি শীঘ্র মরিব না” গঙ্গাতীরে লইয়া একটি খোলার চালাতে তীহাক্কে বাখা হইল । সেখানে তিনি তিন রাত্রি জীবিত ছিলেন। আমি সেই সময়ে গঙ্গাতীবে তাহার সঙ্গে নিয়ত থাকিতাম। দিদিমার মুত্যুব পুর্বণদিন রাত্রিতে আমি এ চালার নিকটবর্তী নিমতলা'র ঘাটে একখানা টাচের উপরে বসিয়া আছি। এ দিন পূর্ণিমার বাত্রিশচন্দ্রোদয় হইয়াছে, নিকটে শ্াশান। তখন দিদিমাব নিকট নাম সঙ্কীর্তন হইতেছিল, “এমন দিন কি হবে, হরিনাম বলিয়। প্রাণ যাবে ৮ বাঁধুব সঙ্গে তাহ অল্প অল্প আমার কাণে আসিতেচিল। এই অবসরে হঠাঁ আমার মনে এক আশ্চধ্য উদাাস-ভ।ব উপস্থিত হইল । আমি যেন আর পুর্বেবর মানুষ নই। ধীশ্বার্যৰ উপব এক্েবাঁবে বিরাগ জন্মিল। যেটাচের উপর বসিয়। আঁটি, তাঁভাই আমার পক্ষে গ্রিক বোঁধ হইল, গাঁলিচা দুলিচ। সকল ভেয় বোঁধ ভইল, মনের মধ্যে এক অভূতপুর্বব আনন্দ উপস্থিত হইল । আমার বয়ম তখন ১৮ আঠারো বৎসর ।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ |
এত দিন আমি বিলাসের আমোদে ডুবিয়া ছিলাম । তত্বজ্ঞানের কিছুমাত্র আলোচনা করি নাই । ধন্ম কি, ঈশ্বর কি, কিছুই জানি নাই, কিছুই শিখি নাই। শ্শানের সেই উদাস আনন্দ, তকাঁলের সেই স্বাভাবিক সহজ আনন্দ মনে আর ধরে না। ভাষা সর্ব দুর্ববল, আমি সেই আনন্দ কিন্ূপে লোককে বুঝাইব ? তাহা স্বাভা- বিক আনন্দ। তর্ক করিয়া, যুক্তি করিয়া সেই আনন্দ কেহ পাইতে পারে না। সেই আনন্দ ঢালিবার জন্য ঈশ্বর অবসর খোঁজেন । সময় বুঝিয্াই তিনি আমাকে এ আনন্দ দিয়াছিলেন। কে বলে ঈশ্বর নাই? এই তো তীর অস্তিত্বের প্রমাণ। আমি তো প্রস্তত ছিলাম না, তবে কোঁথা হইতে এ আনন্দ পাইলাম ? এই ওদাস্য ও আনন্দ লইয়৷ রাত্রি ছুই প্রহরের সময় আমি বাড়ীতে আসিলাম। সে রাত্রিতে আমার আর নিদ্রা হইল না। এ অনিদ্রার কারণ আনন্দ। সারা রান্রি যেন একটা আনন্দ-জ্যোতস্া আমার হৃদয়ে জাগিয়া রহিল। রাত্রি প্রভাত হইলে দিদিমাকে দেখিবার জন্য আঁবাঁর গঙ্গাতীরে যাই। তখন তাহার শ্বাস হইয়াছে । সকলে ধরাধরি করিয়া! দ্িদিমাকে গঙ্গার গর্ভে নামাইয়াছে এবং উৎসাহের সহিত উচ্চৈঃস্বরে “গঙ্গা নারায়ণ ব্রহ্ম” নাঁম ভাকিতেছে। দিদিমার মৃত্যু হইল। আমি নিকটস্থ হইয়া দেখিলাম, তাঁহার হস্ত বক্ষঃস্থলে, এবং অনামিকা অঙ্গুলিটি উদ্ধমুখে আছে । তিনি “হরিবোল” বলিয়া অঙ্গুলি ঘুরাইতে ঘুরাইতে পরলোকে চলিয়া গেলেন। তাহা দেখিয়া আমার বোধ হইল, মরিবার স্ময় উদ্ধে আঙ্গুলি নির্দেশ করিয়। আমাকে দেখাইয়! গেলেন “এ ঈশ্বর ও পরকাল ।৮ দিদিমা েমন- আমার ইহকালের বন্ধু ছিলেন, তেমনি পরকাঁলেরও বন্ধু। -*
| € |
মহা! সমারোহে তাহার শ্রাদ্ধ হইল। আঁমরা তৈল হরি মাখিয়া শ্রা্ধের বৃষকাষ্ঠি গঙ্গাতীরে পুতিয়া আসিলাম। এই কয় দিন খবৰ গোঁলোযোগে কাটিয়া গেল। পরে, দিদিমার মৃত্যার পর্নদিন রাত্রে যেরূপ আনন্দ পাইয়াছিলাম, তাহা পাইবার জন্য আমার চেষ্টা হইল। কিন্ত তাহা আর পাইলাম না। এই সময়ে আমার মনে কেবলই ওদাস্ত আর বিষাদ। সেই রাত্রিতে ওদাস্যের সহিত আনন্দ পাঁইয়াছিলাম, এখন সেই আনন্দের অভাবে ঘন বিষাদ আসিয়াআমার মনকে আচ্ছন্ন করিল । কিরূপে আবার সেই আনন্দ পাইব, তাহার জন্য মনে বড়ই ব্যাকুলতা জন্মিল। আর কিছুই ভাঁল লাগে না। এস্থলে ভাগবতের একটি উপাখ্যানের সহিত আমার অবস্থার তুলনা হইতে পারে।
নারদ বেদব্যাসের নিকটে আপনার কথা বলিতেছেন--“আমি পর্ববজন্মে কোন এক খাষির দাসীপুত্র ছিলাম । এ খষির আশ্রমে বর্ধার কয়েক মাঁস অনেক সাঁধুলোক আশ্রয় লইতেন। আমি তাহাদের শুর্শাধা করিতাম । ক্রমশঃ আমার দিব্য-জ্ঞান জন্মিল এবং মনে হরির প্রতি এঁকান্তিকী ভক্তির উদয় হইল। পরে এ সমস্ত সাঁধু আশ্রম হইতে বিদায় লইবার কালে কুপা করিয়া আমাকে জ্ঞান-রহস্ত শিক্ষা দিয়া যাঁন। ইহার দ্বারা আমি হরি-মাহাতুয সুস্পষ্ট জানিতে পারি । জননী খষির দাসী, আমি তাহার একমাত্র পুত্র। “একাত্মজা মে জননী” আমি কেবল তীহারই জন্য এ খধির আশ্রম ত্যাগ করিতে পারি নাই । একদা তিনি নিশাকাঁলে গো-দোহন করিবার জন্য বাহিরে ষান। পথে একটি কুষ্ণসর্প পাঁদ- স্পৃষ্ট হইবা মাত্র তাহাকে দংশন করে এবং তিনি পঞ্চত্ব প্রাপ্ত হন। কিন্তু এইটি আঁমি স্বীয় অভীষ্ট সিদ্ধির বড় স্থমোগ মনে করিলাম এবং একাকী বিল্লিকাগণনাদিত এক ভীষণ মহাঁবনে প্রবেশ করি- লাম পর্যটন শ্রমে আমার অতিশয় ক্ষুৎপিপাসা হইয়াছিল
| ৬ ]
আঁমি এক সরোবরে সান ও জলপান করিয়া ক্লান্তি দূর করিলাম 1 মন প্রশান্ত হইল । অনন্তর আমি এক অশ্বথ্থ বৃক্ষের তলে গিয়া বসিলাম এবং সাধুগণের উপদেশ অনুসারে আত্মস্থ পরমাতআকে চিন্তা করিতে লাঁগিলাম। মন ভাবে আগ্লত, নেত্রযুগল বাম্পপুণ । সভসা হৃৎ্পদ্ধে জ্যোতিন্য় ত্রাঙ্ষের সাক্ষাতকার লাভ হুইল । সর্ববা্গ পুলকিত হইয়া উঠিল। আঁমি যাঁরপর নাই আনন্দ পাই- লাম । কিন্ত পরক্ষণে আর তীহাঁকে দেখিতে পাইলাম না। সেই শোঁকাঁপহ কমনীয় জপ দেখিতে না পাইয়া! সহসা গাঁত্রোখান করি- লাম ॥। মনে বড় বিষাঁদ উপস্থিত হইল। পরে আমি আবার ধ্যানস্থ হইয়! উহাকে দেখিবার চেষ্টা করিতে লাঁগিলাম, কিন্তু আর পাইলাম না। তখন আঁতুরের ন্যায় অতৃপ্ত হইয়া পড়িলীম, ইত্যব- সরে সহসা! এক দৈববাণী হইল--এ জন্মে তুমি আমাকে আর দেখিতে পাইবে না। ফাহাদের চিত্তের মল ক্ষাঁলিত হয় নাই, যাহারা যোগে অসিদ্ধ, তাহারা আমাকে দেখিতে পায় না। আমি যে একবার তোমাঁকে দেখ! দিলাম, ইহা কেবল তৌমাঁর অন্ুুরাগ' বৃদ্ধির জন্য 1%
আমার ঠিক এইরূপই অবস্থা ঘটিয়াছিল। আমি সেই রাজি, ন- কালের আনন্দ না পাইয়া অত্যন্ত বিষপ্ন হইয়াছিলাম, কিন্তু তাহাই আবার আমার অনুরাগ উত্পাদন করিয়া দিল। কেবল নারদের এই উপাখ্যানের সঙ্গে আমার একটি বিষয়ে মিল হয় না। তিনি প্রথমে খধিদিগের মুখে হরিগুণানুবাদ শ্রাবণ করিয়া হৃদয়ে শ্রদ্ধা ভক্তি লাভ করিয়াছিলেন, পরে তাহাদের নিকটে ব্রহ্গজ্ঞানের অনেক উপদেশ পাইফ়াঁছিলেন । আমি কিন্তু প্রথমে কাহারও মুখে হরি- গুণানুবাদ শ্রবণ করিয়! হৃদয়ে শ্রদ্ধা ভক্তি লাভ করিবার কোন স্থযোগই প্রাপ্ত হই নাই এবং কুপা করিয়া কেহই আমাঁকে বরহ্ম-" তন্বের উপদেশ দেন নাই। আমার চারিদিকে কেবল“ লাকী"
84
আমোদের অনুকূল বায়ু অহনিশি প্রবাহিত হইতেছিল। এত প্রতিকূল অবস্থাতেও ঈশ্বর আপনি দয়া করিয়া আমার মনে বৈরাগ্য দিলে ও আমার সংসারাশক্তি কাড়িয়। লইলেন এবং তাহার পরে সেই আনন্দময় শ্বীর আনন্দের ধারা আমার মনে বর্ষণ করিয়া আমাকে নুতন জীবন গ্রীন করিলেন । তাহার এ কপার কোথাও ভুলনা হয় না। তিনিই আমার গুরু, তিনিই আমার পিতা ।
তৃতীয় পরিচ্ছ্দে।
দিদিমীর মৃত্যুর পর এক দিন আমার বৈঠক খানায় বসিয়া আমি সকলকে বলিলাম যে, আজ আমি কল্পতরু হইলাম। আমার নিকটে আমার দিবার উপযুক্ত যে যাহা কিছু চাহিবে, তাহাকে আমি তাহাই দিব। আমার নিকট আর কেহ কিছু চাহিলেন না, কেবল আমার জেষ্টতাত পুত্র ব্রজ বাবু বলিলেন যে, আমাকে এ বড় ছুইট। আয়না দিন, এ ছবিগুলান দিন, এ জরিরু পৌঁবাঁক দিন, আমি ততক্ষণাৎ তাহাকে সকলই দিলাম । তিনি পরদিন মুটে আনিয়া বৈঠক খানার সমস্ত জিনিস লইয়া গেলেন। ভাল ভাল ছবি ছিল, আর আর বহুমুলা গৃহ-সজ্জা1 ছিল, সমস্তই তিনি লইয়া গেলেন। এইরূপে আমার সকল আস্বাব বিলাইলাম। কিন্তু আমার মনের যে বিষাদ, সেই বিষাদ, তাহ! আর ঘুচে না। কিসে শান্তি পাইব, কিছুই বুঝিতে পাঁরিলাম না। এক এক দিন কৌচে পড়িয়া ঈশ্বর বিষয়ক সমস্যা ভাবিতে ভাবিতে মনকে এমনি হাঁরাইতীম যে, কৌচ হইতে উঠিয়া, ভোজন করিয়া, আবার কৌচে কখন পড়িলাম তাহার আমি কিছুই জানি না__-আমার বৌধ হইতে- ছিল, যেন আমি বরাবর কৌচেই পড়িয়া আছি। আমি স্থবিধা পাইলেই দিবা ছুই প্রহরে একাকী বোটানিকেল উদ্যানে যাঁইতাম। এই স্থানটি খুব নির্জন। এ বাগানের মধ্যস্থলে যে একটা সমাধি- স্তস্ত আছে, আমি গিয়া তাহাতে বসিয়া থাকিতাম। মনে বড় বিষাদ। চারিদিক অন্ধকার দেখিতেছি। বিষয়ের প্রলোভন আর নাই কিন্তু ঈশ্বরের ভাবও কিছুই গাইতেছি না, পার্থিব ও ্বগীয় সকল প্রকার স্থখেরই অভাব। জীবন নীরস, পৃথিবী এপগয অলাং।.. কিছাতেই স্্খ নাই, কিছুতেই শান্তি নাঈ
রি 1
ঠুই এহবেধ সুম্যেব কিবণ-বেখাসকল যেন কৃষ্ণবা বোঁধ হইত। সেই সময় আমাঁব মুখ দিয়া সহসা এই গানটি বাহির হইল-_এহবে, কি হনে দিবা আলোকে, জ্ঞান বিনা সব অন্ধকার 1” এই আমার প্রথম গান। আমি সেই সমাধি স্তত্তে বসিয়া একাকী এই গানটি মুক্তকঞ্চে গাইতাঁম। তখন সংস্কত শিখিতে আমার বড় ইচ্ছ!
ভইল ।
ংস্কৃত ভাষার উপর আমার বাঁলক-কাঁল।বধিই অনুবাগ চাঁণক্যে শ্লোক যত্বপুর্ববক তখন মুখস্থ করিতাম। কোন ঠাল শ্লোক শুনিলে অমাঁন তাহা শিখিয়া লইতাম। তখন ঈর ঘাঁটাতে একজন সভাপপ্ডিত ছিলেন। তাহার নাম শান্ত চুড়ামণি, নিবাস বাঁশবেড়ে। তিনি অগ্রে 'মাহন ঠাকুরের আশ্রয়ে ছিলেন। পরে আমাদের হন। চপপ্ডিত ও তেজন্বী; আমার বয়স তখন অল্প, তিনি আমাকে ল বাসিতেন। আঁখি তাহাকে ভক্তি করিতাম। একদিন ম, আঁমি আপনার নিকট মুগ্ধবোধ ব্যাকরণ পড়িব। তিনি ভাঁলই তো, আঁমি তোমাকে পড়াইব। তখন চুড়ামণির মুগ্ধীবোধ আবন্ত করিলাম এবং ঝট ধঘভ,জড়দগব, করিতে লাঁগিলাম। সংস্কত ভাষায় প্রবেশ হইবার জন্য,
পে স্পাোগিপা পে পেস
রব নিকট আমার মুগ্ধবোধ পড়িবার প্রথম উৎসাহ । এক-
9
ঢামৃণি তাহার হাতের লেখ। একখানি কাগজ আস্তে আস্তে করিয়া আমার হাতে দিলেন, কহিলেন; এই লেখাতে সহি | দেও। আমি বলিলাম কি লেখা ? পড়িয়া দেখি, তাহাতে [আছে যে, তাহার পুত্র শ্যামাচরণকে চিরকাল আমায় প্রতি- [ করিতে হইবে । আমি তাহাতে তখনি সহি করিয়! দিলাম ।
চুড়ামণির প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও ভালবাসা! ছিল, তিনি বলিলেন
আর
আমি অমনি তাহাতে জহি করিয়া দিলাম । তাঁহার বিষয়,
আমি তখন কিছুই প্রণিধান করিলাম না। কিছুদিন'পরে আদাদের
৮
র্
1১০]
সভাপগ্ডিত চূড়ামণির স্ৃত্যু হইল । তখন শ্যামাঁচপণ আমার সেই হ্বাক্ষর টুকু লইয়। আমার নিকট আসিলেন, কহিলেন যে, “আমার পিতার মৃত্যু হইয়াছে, আমি. নিরাশ্রায়। এখন আপনার আমাকে প্রতিপালন করিতে হুইবে। এই দেখুন আপনি পূর্বেই ইহা _লিখিয়া। দ্রিয়াছেন।” আমি তাহ! অঙ্গীকার করিয়া লইলাম এবং তদ্দবধধি শ্যামাচরণ আমার নিকটে থাঁকিতেন। সংস্কৃত ভাষায় তাহার কিছু অধিকার ছিল। আমি তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, ঈশ্বরের তত্বকথা কিসে পাঁওয়া যায় ? তিনি কহিলেন, মহাভারতে । তখন আমি তীহার নিকট মহাভারত পড়িতে আরম্ত করিলাম। এই গ্রন্থ খুলিবামাত্র একটি শ্লোক আমার চক্ষে ঠেকিল। তাহা এই-_“ধন্মে মতির্ভবভভূবঃ সততোখিতানাঁং সহেকএব পরলোক- গতস্য বন্ধুঃ 1৮ “অর্থান্ত্রিয়ণ্চ নিপুণৈরপি সেব্যমানা নৈবাণু- ভাঁবমুপয়ন্তি নচ স্থিরত্বং” তোমাদের ধন্মে মতি হউক, তোমরা সতত ধন্ধে অনুরক্ত হও, সেই এক ধন্মই পরলোকগত ব্যক্তির বন্ধু। অর্থ, স্ত্রীদিগকে নিপুণরূপে সেবা করিলেও তাহাদিগকে আয়ত্ত করা যাঁয় না এবং তাহাদের স্থিরতাঁও নাই। মহা- ভারতের এই শ্লৌকটি পাঠ করিয়া আমার বড়ই উত্সাহ জন্মিল। আমার সংস্কীর ছিল যে, সকল ভাষাতেই বাঙ্গাল! ও ইংরাজী ভাষার স্যার, বিশেষ্যের অগ্রে বিশেষণগুলি থাকে ; কিন্তু সংস্কতে দেখি- লাম যে, বিশেষ্য এখানে, বিশেষণ সেই সেখানে । এইটি আয়ত্ত করিতে আমার কিছুদিন লাগিয়াছিল। আমি এই মহাভারতের অনেক অংশ পাঠ করি। ধৌম্য খষির উপাখ্যানে উপমন্যুর গুরু- ভক্তির কথ! আমার বেশ মনে পড়ে। . এখন তো এ বৃহৎ গ্রন্থ অন্ুবাদিত হইয়া! অনেকের পাঁঠ্য হইয়াছে, কিন্তু তখনকার কালে এ শুলগ্রন্থ অল্প লোকেই পাঠ করিত। আমি ধর্ম পিপাসায় উহার অনেকাংশ পাঠকরি। একদিকে যেমন তত্বান্বেণের জন্য সংস্কৃত,
চ এত, +ও
তেমনি অপরদিকে ইংরাজী । আমি যুরোপীয় দর্শনশীন্ত্র বিস্তর পড়িয়াছিলাম, কিন্তু এত করিয়াঁও মনের যে অভাঁৰক সেই অভাব, তাহা কিছুতেই ঘুচাইতে পারিলাম না । সেই বিষাঁদের অন্ধকার, সেই অশান্তি, হৃদয়কে অতিমীত্র ব্যথিত করিতেছিল। ভাবিলাঁম প্রকৃতির অধীনতাই কি মন্ুুষ্যের সর্ববন্ষ ? তবে তো৷ গিয়াছি। এই পিশাঁচীর পরাক্রম দুনিবার। অগ্নি স্পর্শমাত্র সমস্ত ভক্মসাৎ করিয়া ফেলে । যানষোগে সমুদ্রে যাঁও, ঘূর্ণাবর্ত তোমাকে রসাঁতলে দিবে, বায়ু বিষম বিপাকে ফেলিবে। এই পিশাচী প্রকৃতির হস্তে কাহারও নিস্তার নাই। ইহার নিকট নতশিরে থাকাই যদি চরম কথা হয়, তবে তো! গিয়াছি। আমাদের আশ কৈ, ভরসা কৈ $ আবার ভাবিলম, যেমন ফটোগ্রাফের কাচপাত্রে সুধ্যকিরণের ছার বস্ত্র প্রতিবিদ্বিত হয়, সেইরূপ বাহ ইন্দ্রিয় দ্বারা মনের মধ্যে বাহ) বস্তুর একট অবভাস হয়, ইহাই তোজ্ঞান। এই পথ ছাড়া জ্ঞানলাভের আর কি উপায় আছে ? মুরোপের দর্শনশান্জ আমার মনে এইরূপ আভাস আনিয়াছিল। কিন্তু একজন নাস্তিকের নিকট এই টুকুই ঘথেষ্ট । সে প্রকৃতি ছাড়া আর কিছু চার না। কিন্তু আমি ইহাতে কিরূপে তৃপ্ত হইব? আমার চেষ্টা ঈশ্বরকে পাইব।র জন্য--অন্ধবিশ্বীসে নয়, জ্ঞানের আলোকে । তাহ! না পাইয়! আমার ব্যাকুলতা দিন দিন আরে! বাড়িতে লাগিল, এক একবার ভাবিতাম, আমি আর বাঁচিব না।
পরিচ্ছেদ
_ এই বিষাদ অন্ধকারের মধ্যে ভাবিত্তে ভাবিতে বিদ্যুতের ন্যায় একট! আলোক চমকিত হইল । দেখিলাম, বাহ্য ইন্দ্রিয়দ্ধারা রূপ, বস, গন্ধ, শব্দ, স্পর্শের যোগে বিষয়-জ্ঞান জন্মে। কিন্তু এই জ্ঞানের সহিত আমি থে জ্ঞাতা, তাহাও তো। জাঁনিতে পাঁরি। দর্শন, স্পর্শন, আস্রাণ ও মননের সহিত আমি যে ভ্রষ্টা, স্পষ্টা, ঘাত। ও মন্তা এ জ্ঞীনও তো পাই। বিষয়-জ্ঞানের সহিত বিষয়ীর বৌধ হয়, শরীরের সহিত শরীরীকে জানিতে পারি। আমি অনেক অনুসন্ধানে সর্বপ্রথমে এই আলোক টুকু পাই। যেন ঘোর
এ অগ্ধকারাঁকৃত স্থানে ূরধ্কিরণের একটি রেখা আসিয়া পড়িল।
.. বিষয়-বোখের সহিত আঁমি আপনাকে আপনি জানিতে পারি, ইহা।
রি বুঝিলাম । পরে যতই আলোচন। করি, জ্ঞানের প্রভাব বিশ্বসংসারে
ও সর্বত্র দেখিতে পাই। আমাদের জন্য চত্র সূর্য নিয়মিতরূপে উদয়াস্ত: হইতেছে, আমাদের জন্য বায়ু বৃষ্টি উপযুক্তর্ূপে সঞ্চালিত
_ হুইভেছে। ইহারা সকলে মিলিয়া আমাদের জীবন পোষণের
১১101 নি ! রা 1 1৪ নথ 11508 সির
লক্ষ্য সিদ্ধ করিতেছে । এইটি কাহার লক্ষ্য? জড়ের তো
১. লক্ষ্য হইতে পারে নাঁ_চেতনেরই লক্ষ্য । অতএব একটি চেতনা" :
_.. দিল ট তিনিই, ঘিনি ইহাকে প্রাণ দিয়াছেন। আবার, ম তার ;
- খান পুরুষের শাসনে এই বিশ্বসংসাঁর চলিতেছে । দেখিলাম, শিশু ভূমিষ্ঠ হইবামাত্রে মাতার স্তন্যপাঁন করে, ইহা! কে তাঁহাকে শিখাইয়া |
মনে কে স্সেহ প্রেরণ করিল ? যিনি তাহার স্তনে দুগ্ধ দিলেন/
.. ভিনি। তিনিই সেই প্রয়ো [জন-বিজ্ঞানবান্ ঈশ্বর, ধাহার শাসনে _ জগত্সংসার চলিতেছে । কি এতটুকু জ্ঞাননেত্র আমার ফুল,
|»
উখন একটু আরাম পাইলাম । বিষাদ-ঘন অনেক কাটিয়া গেল। তখন কিছু আশ্বস্ত হইলাম । |
বন্রশুন্রে প্রথম বয়সে আমি যে অনন্ত আকাশ রে অনন্তের পরিচয় পাইয়াছিলাম, একদিন ভাঁবিতে ভাবিতে তাহা হঠাৎ আমার মনে পড়িয়া গেল, আবার আমি একাঁগ্র মনে অগণ্য গ্রহ নক্ষত্র খচিত এই অনন্ত আকাশের উপরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করিলাম এবং অনন্তদেবকে দেখিলাম, বুঝিলাম যে অনম্তদেবেরই এই মহিমা । তিনি অনস্ত-জ্ঞানস্রূপ, ফাঁহা হইতে আমরা পরিমিত জ্ঞান ও তাহার আধার এই অবয়ব পাইয়াছি, তাহার কোন অবয়ব নাই। তিনি শরীর ও ইন্দ্রিয় রহিত। তিনি হাত দিয়া এ বিশ্ব গড়ান নাই। কেবল আপনার ইচ্ছার দ্বার এই জগৎ রচনা করিয়াছেন। তিনি কালীঘাটের কাঁলীও নহেন--তিনি আমাদের বাড়ীর শালগ্রামণ্ড নহেন। এইখানেই পৌনভ্তলিকতার মূলে কুঠারাঘাত পড়িল। স্য্টির কৌশল-চিন্তায় অষ্টার জ্ঞানের পরিচয় পাই। নক্ষত্রথচিত আকাশ দেখিয়া বুঝি তিনি অনন্ত। এই সুত্র টুকু ধরিয়া তাহার স্বরূপ মনের মধ্যে আরও খুলিয়া গেল। দেখিলাম, ধিনি অনন্তজ্ঞান। তাহার ইচ্ছাকে কেহ বাধা দ্রিতে পারে ন]1। তিনি যাহা ইচ্ছা করেন তাহাই হয়। আমরা, সকল উপকরণ সংগ্রহ করিয়! রচনা করি, তিনি তীহার ইচ্ছায় সকল উপকরণ সৃষ্টি করিয়া রচনা করেন। তিনি জগতের কেবল রচনা কর্তা নহেন, তাহা হইতে উচ্চ, তিনি ইহার কৃষিকর্তা। এই ্ষট বস্ত সকল অনিত্য, বিকারী, পরিবর্তনশীল ও পরতন্ত্র। ইহাদিগকে যে পূরণভ্ঞান সৃষ্টি করিয়াছেন ও চাঁলাইঈতেছেন তিনিই নিতা, অবিকৃত, অপরিবর্তনীয় ও শ্বতন্ত্র। সেই নিত্য সত্য পুর্ণ পুরুষ সকল মঙ্গলের হেতু এবং সকলের নন্ভজনীর়। কতদিন ধরিয়। এইড রি ! আম্মর বুদ্ধির খালোচনায় হর. করিলাম: কত, সাধনার পর
[৯] এই সিদ্ধান্তে উপনীত ইইলাম। তথাপি আমার হৃদয় কাপিতে লাখিল। জ্ঞান-পথ অতি ছুর্গম পথ, এ পথে সাহস দেয় কে? আমি যে সিদ্ধান্তে উপনীত হইলাম তাহাতে সা দেয় কে ? কিরূপ সায়? যেমন পদ্মার মাঁবীর নিকট হইতে আমি একটা সায় পাইয়াছিলাম, সেইরূপ সায়। |
আমি একবার জমীদারী কাঁলীগ্রামে যাই । অনেক দিনের পর বাড়ীতে ফিরি। আমি পদ্মার উপর বোটে। তখন বর্ষাকাল, আঁকাঁশে ঘোর ঘনঘটা, বেগে বায়ু উঠিয়াছে। পল্মা তোলপাড় হইতেছে, মাঝীর! ভারি তুফান দেখিয়। আঁর অগ্রীসর হইতে পারিল না, কিনারায় বোট বাঁধিয়া ফেলিল। সেই. কিনারাতেও তরঙ্গে বোট স্থির থাকিতে পারিতেছে না। কিন্তু বুদিন বিদেশে, শীঘ্র বাড়ীতে আসিতে বড় ইচ্ছ|। বেল! ৪ চারিটাঁর সময়ে একটু বাতাস কমিলে আমি মীবীকে বলিলাম ষে, এখন নৌকা ছাড়িতে পারিবি ? সে বলিল, “হুজুরের হুকুম হয় তে। পারি ।৮ আমি মাঝীকে বলিলাম, তবেছাড়। তাঁর পর দেখি সময় চলিয়া যাঁয়, তবু নৌকা ছাড়ে না । আধ ঘণ্টা হইয়া গেল তবু ছাঁড়ে না । মাবীকে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম তুই যে বঙ্লি, হুজুরের হুকুম হুইলে নৌকা ছাড়িয়া দিতে
পারি, আমি তো হুকুম দ্রিয়াছি, তবে এখনও ছাঁড়িলি নাকেন%
এখন একটু খাড় থেমেছে। আবার কখন্ ঝড় উঠিবে, তাহার ঠিক নাই। যদি ছাড়িতে হয় তো এখনি ছাঁড়। সে বলিল যে, বৃদ্ধ দেয়ানজী .
বলিলেন-_«ওরে মাঝি, এমন কন্মন কি করিতে হয়? একে এই রি
সর্দার মোহনা, কুলকিনারা কিছুই দেখা যায় না, তাহাতে শ্রাবণের .
সক্রান্তি। ঢেউয়ের তোড়ে নৌকা কিনারাতেই থাকিতে পারিতেছে রা
না। তুই কিনা এই অবেলায় এহেন পদ্মায় পাড়ি দিতে চাস ?
7৮ 2,
_দেয়ানজীর এই কথায় ভয় পেয়ে আমি নৌকা ছাড়িতে পারি নাই নি
আমি বলিলাম ছাড়। দে অমনি নৌকা খুলে পাইল তুলে দিলে। রি
আনান
|] ১৫ 7]
অমনি বাতাসের এক ধাক্কায় নৌকা পদ্মার মধ্যে চলিয়া গেল। হাজার নৌকা কিনারায় বাঁধ। ছিল, তাহারা সকলে একন্বরে বলিয়! উঠিল-স্ঞএখন যাবেন না, যাবেন না তখন আমার হৃদয় ডুবিয! গেল। কি করি আর ফিরিবাঁর উপায় নাই-_-নৌক। পাইল পাইয়া শঁ! শা করিয়া! চলিতে লাগিল । খানিক গিয়া দেখি যে তরঙ্গে তরঙ্গে জল ফাঁপিয়া সম্মুখে যেন একটা দেওয়াল উঠিয়াছে। নৌকা তাহাকে ভেদ করিতে ছুটিল, আমার প্রাণ উড়িয়া গেল। এমন সময়ে আদুরে
- দেখি, এক খাঁনা ডিজি হাবু ডূবু খাইতে খাইতে মোচার খোলার মত
ওপার হইতে আসিতেছে । তাহার মাবী আমাদের সাহস দেখিয়। সাহস দিয় টেচাইয়। বলিষ়া। উঠিল-_“ভয় নাই চলে যাঁন”। আমার উৎসাহে উৎ্সাহর স্বর মিশাইয়া এমন ভরসা দেয় কে৪ আমি
. এইরূপ সায় চাই । কিন্তবুহা! তা আর কে দ্রিবে ?।
পঞ্চম পরিচ্ছ্দে।
যখনই আঁমি বুঝিলাম যে ঈশ্বরের শরীর নাই, তাহার প্রাতিম। নাই, তখন হইতে আমার পৌত্তলিকতার উপর ভারি বিদ্বেষ জন্মিল। রাম মোহন রায়কে ত্বরণ হইল--আঁমাঁর চেতন হইল, আমি তাহার আন্বগামী হইবাঁর জন্য প্রাণ ও মন সমর্পণ করিলাম ।
শৈশব কাল অবধি আমার রাম মোহন রায়ের সহিত সংঅব। আমি তাহার স্কুলে পড়িতাম। তখন আরও ভীঁল স্কুল ডিল, হিন্দু" কাঁলেজ ছিল। কিন্তু আমার পিতা রাম মোহন রায়ের অনুরোধে আমাকে এ স্কুলে দ্েন। স্কুলটি হেছুয়ার পুক্ষরিনীর ধারে প্রতিঠিত। আমি প্রায় প্রতি শনিবার দুইটার সময় ছুটি হইলে রমাপ্রসাদ রায়ের সহিত রাম মোহন রাঁয়ের মানিক তলার বাগানে যাইতাঁম। তন্য দ্রিনও দেখা করিয়া আঁমিতাঁম। কোন কোন দ্রিন আমি তথায় গিয়। বড়ই উপভ্ব করিতাম। বাগানের গাছের নিচু ছিড়িয়া, কখনো! কড়াইশু-টি ভাঙ্গিয়া মনের স্থুখে খাইতাম। রামমোহন রায় একদিন কহিলেন, ব্রাদার ! রৌদ্রে হুটা পাটি করিয়া কেন বেড়াও, এইখানে বোসো। যত নিটু খেতে পার এখানে বসিয়া খাও। মালিকে বলিলেন, যাঃ গাছথেকে নিচু পেড়ে নিয়ে আয়। সে তৎক্ষণাৎ এক থাঁল! ভরিয়া নিচু আনিয়া দিল। তখন রামমোহন রায় বলিলেন, যত ইচ্ছা নিচু খাঁও। তাহার মুত্তি প্রশান্ত ও গম্ভীর । আমি বড় শ্রদ্ধা ও ভক্তির সহিত তীহাকে দেখিতাম। বাগানে একটা! কাঠের দোল। ছিল। রামমোহন বায় অঙ্গ চালনার জন্য. তাহাতে দোল খাইতেন। আমি বৈকাঁলে বাগানে গেলে তিনি আমাকে দেই দোলায় বসাইয়া আপনি টানিতেন, ক্ষণেক পরে আপনি তাহাতে বসিয়া বলিতেন ব্রাদার! এখন তুমি টাঁদ। "
| ১৭ ]
অমি পিতার জেষ্ঠ পুত্র। কোন. কার্ধ্যোপলক্ষে নিমন্ত্রণ করি- 'বাঁর জন্য আমাকেই বাঁড়ী বাড়ী যাইতে হইত। আশ্বিন মাসের দুর্গোঞ্পব। আমি এই উপলক্ষে রাম মোঁহম বাঁয়কে নিমন্ত্রণ করিতে যাই । গিয়া বলিলাম--রাষমণি ঠাকুরের নিবেদন, তিন দ্রিন আপনার প্রতিম! দর্শনের নিমন্ত্রণ । শুনিয়াই তিনি বলিলেন, ব্রাদার! আমাকে কেন? ব্বাধা প্রসাদকে বল। এত দিন পরে সেই কথাঁর অর্থ ও ভাঁব বুঝিতে পারিলাম। এই অবধি আমি মনে মনে সংকল্প করিলাম যে, রাম মোহন রায় যেমন কোন প্রতিমা পুজায় ও পৌন্তলিকতায় যোগ দিতেন না, তেমনি আমিও আর তাহাতে যোগ দিব না॥ কোন প্রতিমাকে পুজা করিব ন। কোন প্রতিমাকে প্রণাম করিব না; কোন পৌন্তুলিক পুজায় নিমন্ত্রণ গ্রহণ করিব না। সেই অবধি আমার এই সংকল্প দৃঢ় হইল । তখন জানিতে পারিলাম না যে, কি আগুনে প্রবেশ করিলাম ।
আমার ভাইদের লইয়া একটা দল বাঁধিলাম। আমর! সকলে মিলিয়! সংকল্প করিলাম যে, পুজার সময়ে আমরা পুজার দালানে কেহই যাইব না, ঘর্দ কেহ যাই তবে প্রতিমাকে প্রণাম করিব ন!। তখন সন্ধ্যাকালে আরতির সময় আমার পিতা দ্বালানে ষাইতেন। স্থতরাং তাহার ভয়ে আমাদেরও তখন সেখানে যাইতে হইত। কিন্তু প্রণামের সময় যখন সকলে ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রণাম করিত, আমর তখন দীাড়াইয়! থাকিতাম--আমরা প্রণাম করিলাম কিনা কেহই দেখিতে পাইত ন|।
যে শান্্রে দেখিতাম পৌত্তলিকতাঁর উপদেশ, সে শাস্ত্রে আমার আর শ্রদ্ধা 1 থাকিত না আমার তখন এই ভ্রম হুইল যে, আমাদের সমুদায় শাস্ত্র পৌন্তলিকতার শান্্র। অতএব তাহা হইতে নিরাকার নির্বিকার ঈশ্বরের তত্ব পাওয়া অসম্ভব। আমার মনের যখন এই-
প্রকঠুর নিরাশ ভাব, তখন হঠাৎ এক দিন সংস্কৃত পুস্তকের একটা ৩)
| ১৮ ] পাতা আমার সম্মুখ দিয়া উড়িয়া যাইতে দেখিলাম। ওহস্ুুক্য বশতঃ তাহ! ধরিলাম। কিন্তু তাহাতে যাহা লেখা আছে, তাহার কিছুই বুঝিতে পারিলাম নাঁ। শ্যামাচরণ ভট্টাচাধ্য আমার কাছে বসিয়াছিলেন, আমি তাহাকে বলিলাম, আমি ইউনিয়ান ব্যাঙ্কের কম্ধম সারিয়া শীগ্র বাড়ীতে ফিরিয়া আমিতেছি, তুমি ইহার মধ্যে এই পাতার শ্লোক গুলানের অর্থ করিয়া রাখ, কুঠী হইতে আইলে আমাকে সব বুঝাইয়া দিবে । এই বলিয়া আমি ইউনিয়ন ব্যাঙ্কে
তাড়াতাড়ি চলিয়া গেলাম। এ সময়ে আমি ইউনিয়ান ব্যাঙ্কে
কন্ম করিতাম। আমার ছোট কাঁক। রমা নাথ ঠাকুর তাহার ধন রক্ষক। আমি তীহাঁর সহকারী । ১০ টা হইতে যতক্ষণ না কাজ নিকীশ হয়, ততক্ষণ তথায় আমার থাকিতে হইত । ক্যাশ বুঝা ইয়া দিতে রাত্রি দশটা বাজিয়া যাইত। কিন্তু সে দিন শ্যামাচরণ ভষ্টাচাধ্যের নিকট হইতে পু*থির পাতা বুঝিয়া লইতে হইবে, অতএব ক্যাশ বুঝাইয়া দিবার গৌণ জার সহ্য হইল না। আমি ছোট কাকাকে বলিয়া কহিয়া দিন থাকিতে থাকিতে বাড়ীতে ফিরিয়া আসিলাম। আমি আমার বৈঠক খানার তেতালার তাড়াতাড়ি যাইয়াই শ্য1মাচরণ ভট্টরাচাধ্যকে জিজ্ঞাসা করিলাম যে, সেই ছাপার পাতাতে কি লেখা আছে, আমাকে বুঝা ইয়া দাও । তিনি বলিলেন, আঁমি এতক্ষণ এত চেষ্টা করিলাম কিন্তু তাহার অর্থ কিছুই বুঝিতে পারিলাম না। আমি আশ্ধ্য হইলাম । ইংরাজ পপ্ডিতের! তো ইংরাজি সকল গ্রন্থই বুঝিতে পারে। তবে সংস্কৃতবিৎ পণ্ডিতের সকল সংস্কৃত গ্রন্থ বুঝিতে পাঁরেন না কেন ?
আমি জিজ্ঞাপা করিলাম, তবে কে বুঝিতে পারে ? তিনি বলিলেন, এতো সব ব্রহ্ষসভার কথা-_ ব্র্ষ-সভার রাম চন্দ্র বিদ্যাবাগীশ
বুঝিতে পারেন । আমি. বলিলাম তবে তাঁহাকে ডাক বিদ্যাবাগীশ
খানিক পরেই আমার নিকট আপিয়। উপস্থিত হইলেন । তিনি পাতা
| ১৯ ]
পড়িয়া বলিলেন, এ যে ঈশোপনিষু। “ঈশাবাস্যমিদং সর্ববং য্ুকিঞ্চ জগত্যাপ্তজগণ্ড । তেন ত্যক্তেন ভুপ্ভীথা মাগুধঃ কস্য সিদ্ধনং ।৮ যখন ক্বিদ্যাবাগীশের মুখ হইতে “ঈশাবাস্যমিদং সর্ববং” ইহার অর্থ বুঝিলাম, তখন স্বর্গ হইতে অস্থত আনিয়া আমাকে অভিষিক্ত করিল । আঁমি মানুষের নিকট হইতে সায় পাইতে ব্যস্ত ছিলাম, এখন স্বর্গ হইতে দৈববাণী আসিয়া আমার মন্ম্ের মধ্যে সার দিল-_ আমার আকাঙ্খা চরিতার্থ হইল ॥। আমি ঈশ্বরকে সর্বত্র দেখিতে চাঁই, উপনিষদে কি পাইলাম ? পাইলাম যে “ঈশ্বর ছারা সমুদাঁয় জগৎকে আচ্ছাদন কর 1” ঈশ্বর দ্বারা সমুদায় জগৎকে অচ্ছাদন করিতে পাঁরিলে আর অপবিব্রতা কোথায় ? তাহা হইলে সকলই পবিত্র হয়, জগণ্ড মধুময় হয় । আমি যাহা চাই তাহাই পাইলাম । এমন আমার মনের কথ! আর কোথাও হইতে শুনিতে পাই নাই । মানুষে কি এমন সায় দিতে পারে £ সেই ঈশ্বরেরই করুণা আমার হৃদয়ে অবতীর্ণ হইল, তাই “ঈশাবাস্যমিদং সর্বরং” এই গুঢ় বাক্যের অর্থ বুঝিলাম। আহা'! কি কথাই শুনিলাম--“তেন ত্যক্তেন ভূপ্জীথা?» তিনি বাহ! দান করিয়াছেন তাহাই উপভোগ কর । তিনি কি দান করিয়াছেন? তিনি আপনাকেই দান করিয়াছেন । সেই পরম ধনকে উপভোগ কর-আর সকল ত্যাগ করিয়! সেই পরম ধনকে উপভোগ কর। আর সকল ত্যাগ করিয়া কেবল তাহাকে লইয়াই খাক। কেবল তীহাঁকে লইয়া থাকা মানুষের ভাগ্যেকি মহৎ কল্যাণ। আমি চির দিন যাহা চাঁহিতেছি ইহা তাহাই বলে ।. 863 ৃ
আমার বিষাঁদের যে তীব্রতা, তাহা এই জন্য ছিল যে, পার্থিব ও স্বর্গীয় সকলপ্রকার স্থুখ হইতেই আমি বঞ্চিত হইয়াছিলাম। সংসারেও আমার কোনপ্রকার সুখ ছিল না এবং ঈশ্বরের আনন্দও ভোগ করিতে পারিতেছিলাম না। কিন্তু যখন এই দেববাণী
| ২৭ ]
আমাঁকে বলিল যে, সকলপ্রকার সাংসারিক স্বুখ ভোগের কামনা পরিত্যাগ করিয়া কেবল শ্বরকেই ভোগ কর, তখন, আমি যাহ! চাহিতেছিলাম তাঁহ! পাইয়া আনন্দে একেবারে নিমগ্ন হইলাম ।
এ আমার নিজের ছুর্ববল বুদ্ধির কথা নহে, এ সেই ঈশ্বরের উপদেশ । সে খষি কি ধন্য ধাহার হৃদয়ে এই সত্য প্রথমে স্থান পাইয়াছিল। ইশ্বরের উপরে আমার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মিল, আমি সাংসারিক স্থখের পরিবর্তে ব্রল্ধানন্দের আত্বাদি পাইলাম । আহা, সেদিন আমার পক্ষে কি শুভদিন--কি পবিভ্রে আনন্দের দিন। উপনিষদের প্রতি কথ! আমার জ্ঞানকে উজ্জ্বল করিতে লাগিল । উপনিষদকে অবলম্বন করিয়া! আমি দিন দিন আমার গম্য পথে অগ্রসর হইতে লাগিলাম। আমার নিকট সকল গুঢ় অর্থ বজ্র, হইতে লাগিল। আমি বিদ্যাবাগীশের নিকট ক্রমে ঈশা, কেন, কঠ, মুণ্ডক, মাঁতুক্য উপনিষণ্ড পাঠ করি এবং অন্যান্য পণ্ডিতের সাহায্যে অবশিষ্ট আর ছয় উপনিষগ পাঠ করি। প্রতিদিন যাহ! পড়ি, তাহ! অমনি কস্থ করিয়া তাহার পর দিন বিদ্যাবাগীশকে শুনাইয়া দেই । তিনি আমার বেদের উচ্চারণ শুনিয়া বলিতেন থে, “তুমি এ উচ্চারণ কার কাঁছে শিখিলে £ আমরা তো এ প্রকার উচ্চারণ করিতে পারি না|” আমি বেদের উচ্চারণ এক জন দ্রাবিড়ী বৈদিক ত্রাঙ্মণের নিকট শিখি । যখন উপনিষদে আমার বিশেষ প্রবেশ হইল এবং সত্যের আলোক পাইয়া যখন আমার জ্ঞান ক্রমে উজ্জ্বল হইতে লাগিল, তখন এই সত্যধর্দ্ম প্রচার করিবার জন্য আমার মনে প্রবল ইচ্ছ! জন্মিল। প্রথমে আমার আত্মীয় বন্ধু ধান্ধব এবং ভ্রাতাদিগকে লইয়া একটি সভা সংস্থাপন করিবার ইচ্ছা _করিলাম। আমাদের বাড়ীর পুক্ষরিণীর ধারে একটা ছোট কুঠরী _চুণকাম করাইয়। পরিষ্কার করিয়া লইলাঁম। এদিকে ছূর্গী পূজার কল্প আরম্ত হইল।॥ আমাদের বাটার আর' সকলে এই উৎ্বে
[ ২১ ]
মাতিলেন। আমরা কি শূন্য-হৃদয় হইয়া থাকিব? আঁমরা সেই কৃষ্ণাচতুর্দশীতে আমাদের হৃদয় উৎসাহে পুর্ণ করিয়া একটি সভা! স্থাপন করিলাম । আমরা সকলে প্রাতঃস্াঁন করিয়া শুদ্ধসত্ব হইয়া পুক্ষরিণীর ধারে সেই পরিদ্কৃত কুঠরীতে আসিয়া বসিলাম। আমি যেই সকলকে লইয়া সেখানে বসিলাম, অমনি যেন শ্রদ্ধা আমার হৃদয়ে প্রবেশ করিল। সকলের মুখের পাঁনে তাঁকাইয়া দেখি, সকলের মুখেই শ্রদ্ধার রেখা । ঘরের মধ্যে পবিত্রতার ভাঁবে পূর্ণ আমি ভক্তিভরে ঈশ্বরকে আহ্বান করিয়া কঠোপনিষদের এই শ্লোক ব্যাখ্যা করিলাম। “ন সাম্পরায়ঃ প্রতিভাতি বাঁলং প্রমাদ্যন্তং বিভ্তমোহেন মুঢ়ং। অয়ং লোকোনাস্তি পর ইতি মানী পুনঃ পুনর্বশ- মাপদ্যতে মে।” “প্রমাদী ও ধনমদে মুড নির্বেবোধের নিকটে পরলোক সাধনের উপায় প্রকাশ পায় না। এই লোকই আছে পরলোক নাই-_যাঁহারা এ প্রকার মনে করে, তাহারা পুনঃ পুনঃ আমার বশে অর্থাৎ মৃত্যুর বশে আইসে।” আমার ব্যাখ্যান সকলেই পবিত্রভাবে স্তন্ধভাবে শ্রবণ করিলেন। এই আমার প্রথম ব্যাখ্যান। ব্যাখ্যান শেষ হইয়া গেলে, আমি প্রস্তাব করিলাম যে, এই সভার নাম “তত্বরঞ্জিনী” হউক এবং ইহ চিরস্থায়িনী হউক। ইহাতে সকলেই সম্মতি প্রকাশ করিলেন। ব্রহ্মজ্ঞান লাভ এই সভার উদ্দেশ্য হইল । প্রতি মাসের প্রথম রবিবারে সায়ংকালে এই সভার অধিবেশনের সময় স্থির হইল। দ্বিতীয় অধিবেশনে রাম চন্দ্র বিদ্যাবাগীশ আহুত হইলেন, এবং তাহাকে এই সভার আচাধ্য পদে নিযুক্ত করিলাম। তিনি এই সভার , তত্বরঞ্জিনী নামের পরিবর্তে “তত্ববোৌধিনী” নাম রাখেন। এইরূপে ১৭৬১ শকে ২১শে আঁঙ্বন রবিবার কৃষ্ণপক্ষীয় চতুর্দশী তিথিতে
এই তত্ববোধিনী ৭ হইল | এ ১৭৫
%27. ১০৮৩
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ ।
১৭৬5 শকের ২১শে আশ্িনে' তত্ববোধিনী সভা! প্রতিষ্ঠিত হয়? ইহার উদ্দেশ্য আমাদিগের সমুদ্ায় শাস্ত্রের নিগুঢ় তত্ব এবং বেদান্ত প্রতিপাদ্য ব্রন্খা বিদ্যার প্রচার। উপনিষদকেই আমর বেদান্ত বলিয়া গ্রহণ করিতাম--বেদান্ত দর্শনের সিদ্ধান্তে আমাদের আস্থা; ছিল না। প্রথম দ্রিনে ইহার সভ্য দশ জন মাঁত্র ছিল। ক্রমশঃ ইহার সভ্য সংখ্য। বৃদ্ধি হইতে, লাগিল। অগ্রে ইহার অধিবেশন আমার বাড়ীর নীচেকার একতাঁলার একটি প্রশস্ত ঘরে হইত, কিন্তু পরে ইহার জন্য স্ুকিয়া প্রীটেতে একটি বাড়ী ভাড়া করি। সেই বাড়ী বর্তমানে শ্রীযুক্ত কা'লী' কৃষ্ণ ঠাকুরের অধিকারে, আছে । এই সময় অক্ষয় কুমার দত্তের সহিত আমার সংযোগ হয়। ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্ত ইহাকে আনিয়া আমার সহিত পরিচয় করিয়া দেন.। অক্ষয় বাবু তত্তবোধিনী সভার সভ্য হন। সভার অধিবেশন মাসের প্রথম রবিবারে রাব্রিকালে হইত, রাম চন্দ্র বিদ্যাবাগীশ এই সভায় আচার্যযের আসন গ্রহণ করিয়া উপদেশ দিতেন ।॥ তিনি এই, শ্লে'কটি প্রতিবারই পাঠ করিতেন ॥ “রূপং রূপবিবর্জিজিতস্য ভবতো! ধ্যানেন যদ্র্ণিতং॥ স্তৃত্যানির্ববচনীয়তাঁখিল গুরো দুরীকৃতা ষন্ময় ॥ ব্যাপিত্বঞ্চ বিনাশিতং ভগবতো বস্তীর্ঘযাত্রার্দিনা। ক্ষস্তব্যং জগদীশ তদ্বিকলতাদৌধত্রয়ং মৎকৃতং ৮ হে অখিলগুরো ! তুমি রূপ- বিবর্জিত অথচ ধ্যানের দ্বারা আমি তোমার রূপ যে বর্ণন করিয়াছি এবং স্তৃতির দ্বারা তোমার যে অনির্ববচনীয়তা দূর করিয়াছি ও. তীর্থযাত্রাদির দ্বারা তোমার ব্যাপিত্বকে যে বিনাশ করিয়াছি ; হে জগদীশ ! চিত্তুবিকলতা হেতু আমি যে এই তিন দোষ করিয়াছি তাহা ক্ষমা কর।” এই সভাতে সকল পত্যেরই বক্তৃতা করিবার
1 ২৩ এ
অধিকার ছিল, তবে এ বিষয়ে বিশেষ নিয়ম এই ছিল, যিনি সকলের অগ্রে বক্তৃতা িখিয়া সম্পাদকের হস্তে দিতেন তিনিই বন্তৃতটি পাঠ করিতে পাইতেন। এই নিয়ম থাকাতে কেহ কেহ সম্পাদকের শষ্যার বালিশের নীচে বক্তৃতা রাখিয়া আসিতেন। অভিপ্রায় এই যে, সম্পাদক প্রাতে গাঁত্রোথান করিয়াই তাহাত বক্তৃতা পাইবেন তৃতীয় বতসরে এই তত্ববোধিনী সভার প্রথম সান্বত্সরিক উত্সব অতি জমারোহ পূর্বক হইয়াছিল । এই তত্ব 'বোধিনী সভার ছুই ব্সর চলিয়া গেল, লোকের সংখ্যা আমার মনের মত হয় না,আর একটা সভা যে হইয়াছে তাহ ভাল প্রকাশও হয় না। ইহ1 ভাঁবিতে ভাবিতে, ক্রমে ক্রমে, ১৭৬৩ শকের ভাদ্র কৃষ্টপক্ষীয় চতুর্দশী আসিল । এই সাশ্বৎসর্রিক উপলক্ষে এইবার একট খুব জীকের সহিত সভ। করিয়া সকলকে তাহা জানাইয়' দিতে আমার ইচ্ছ। হইল । তখন সংবাদ পত্রে বিজ্ঞাপন দিলে [বাদ বড় প্রচার হইত নাঁ। অতএব আমি করিলাম কি না, কলিকাতায় যত আঁফিস ও কাধ্যালয় আছে, সকল আফিসের প্রত্যেক কম্দ্রচারীর নামে নিমন্ত্রণ পাত্র লিখিয়া পাঠাইয়। দিলাম ॥ কম্মচারীরা আফিসে আসিয়া দেখিল যে, তাহাদের প্রত্যেকের ডেক্ুসের উপর আপন আপন নামের এক এক খানা পত্র রহিয়াছে-_-খুলিবা দেখে, তাহাতে তত্ববোধিনী সভার নিমন্ত্রণ । তাহারা কখন তন্ববোঁধিনী সভার নামও শুনে নাই। আমর! এ দ্রিকে সারাদিন ব্যস্ত । কেমন কযিয়। সভার ঘর ভাল সাজান হইবে, কি করিয়া পাঠ ও বক্তুত; হইবে, কে কি কাঁজ করিবেন, তাঁহারই উদ্দ্যোগ । সন্ধ্যার পুর্ব হইতেই আমর! আলে। জ্বালিয়া সভ। সাঁজাইয়! সব ঠিক ঠাক করিঝা। ফেলিলাম। আমার মনে ভয় হইতেছিল, এ নিমন্ত্রণে কি কেহ আসিবেন ? দেখি যে, সন্ধ্যার পরেই লণ্টন আগে করিয়া এক একটি লোক আদিতেছেন।
[ ২৪ ]
আমর! সকলে তাহাদিগকে আহ্বান করিয়া সভাঁর সম্মুখের বাগানে বেঞ্চের উপর বসাইতে লাঁগিলাম। ক্রমে ক্রমে লৌক আসিয়া বাগান ভরিয়া গেল।॥। লোক দেখিয়া আমাদেরও উৎসাহ বাড়িতে লাগিল। কেহ কিছু বুঝিতে পারিতেছেন না ষে, তাহারা কি জন্যই বা আসিয়াছে, এবং এখানে কিই বাহইবে। আমি ব্যগ্র হইয়। ঘড়ী খুলিয়া বারে বারে দেখিতেছি। আটটা বাজে কখন্। যেই আট্ট1 বাঁজিল, অমনি ছাদের উপর হইতে শঙ্খ, ঘণ্ট। ও শিঙ্গা বাজিয়। উঠিল। আর অমনি ঘরের ঘত গুলি দরজ1 ছিল, সকলই একবারে এক সময়ে খুলিয়া গেল। লোকেরা সকলেই অবাক্ হইয়। উঠিল। আমরা সকলকে আহ্বান করিয়া! ঘরের মধ্যে বসাই- লাঁম। সন্মুখেই বেদী । তাহার ছুই পাশ্বে দশ দশ জন করিয়া দুই শ্েণীতে বিশ জন দ্রাবিড়ী ব্রাহ্মণ । তাহাদের গাত্রে লাল রঙের বনাত। রাম চন্দ্র বিদ্যাবাগীশ বেদীতে বসিলেন, দ্রাবিড়ী ব্রাক্ষণের। একস্বরে বেদ পড়িতে লাখিলেন। বেদ পাঠ শেষ হইতেই রাত্রি দশট। বাজিয়া গেল। তাহার পর আমি উঠিয়া বক্তৃতা করিলাঁম। সেই বক্তৃতার মধ্যে এই কথা ছিল যে “এইক্ষণে ইংলন্তীয় ভাষার আলোচনায় বিদ্যার বৃদ্ধি হইতেছে তাহার সন্দেহ নাই এবং এতদ্েশস্থ লোকের মনের অন্ধকীরও অনেক দূরীকৃত হইয়াছে। এইক্ষণে মূর্খ লোকদিগের ন্যায় কান্ঠ লোষ্ট্রেতে ঈশ্বর-বুদ্ধি করিয়। তাহাতে পুজা করিতে তাহাদিগের প্রবৃত্তি হয় না। বেদাঁন্তের প্রচার অভাবে ঈশ্বর নিরাকার চৈতন্য-স্বরূপ, সর্ববগত, বাক্য মনের অতীত, ইহা যে আমাদের শাস্ত্রের মন্ম্ন, তাহা তাহারা: জানিতে পারে না। স্থতরাঁং আপনার ধন্মে এ প্রকার শুদ্ধ ব্রহ্মজ্ঞান না পাইয়। অন্য ধম্মীবলম্বীদিগের শাস্ত্রে তাহা অনুসন্ধান করিতে যায়। তাহাদিগের মনে এই দৃঢ় আছে যে, আমাদিগের শাস্ত্রে কেবল সাকার উপাসনা ; অতএব এ প্রকার শান্তর হইতে তাহাদিখের
| ২৫ |
যে শাস্ত্র উদ্ভম বোধ হয়, সেই শান্ত্র মান্য করে। কিন্তু যদি এই বেদান্তুধন্ প্রচার থাকে, তবে আমাদিগের অন্য ধশ্নে কদাপি প্রবৃত্তি হয়না । আমর। এই প্রকারে আমাদিগের হিন্দুধম্ম রক্ষায় যত পাইতেছি।” আমার বক্তৃতার পর শ্যামাচরণ ভট্টাচার্য্য বক্তৃতা করিলেন, তাহার পর চন্দ্র নাথ রায়, তাহার পর উমেশ চন্দ্র রায়, তত্পরে প্রসন্ন চন্দ্র ঘোঁষ, তদস্তর অক্ষয় কুমার দত্ত, পরিশেষে রম! প্রসাদ রায় । ইহাতেই বান্র্ি প্রায় ১২ট1 বাজিয়। গেল। এই সব কাজ শেষ হইলে রাম চন্দ্র বিদ্যাবাগীশ একট ব্যাখ্যান দিলেন । তাহার পর সঙ্গীত । ২টা! বাজিয়া গেল। লোকগুলান হয়রাণ । সকলেই আফিসের ফেরতা । হয়তো কেহ মুখ ধোর নাই, জল খায় নাই, তথাপি আমার ভয়ে কেহ সভা ভঙ্গের আগে ঘাইতে পারি- তেছে না। কেই বা কি বুঝিল, কেই বা কি শুনিল, কিছুই না, কিন্তু স্ভাটা ভারি জীকের সহিত শেষ হইল । এই আমাদের তত্ববোধিনী সভার প্রথম সাম্বৎসরিক সভা এবং এই আমাদের তন্ববোধিনী সভার শেষ সান্বৎসরিক সভা । এই সাম্মৎসরিক সভা হুয়া! যাই- বার পরে ১৭৬৪ শকে আমি ব্রা্গসমাজের সহিত যোগ দিই । ব্রাক্ম- সমাজের সংস্থাপক মহাত্মা রাম মোহন রায় ইহার ১১ বৎসর পুর্বে ইংলগ্ডের বৃষ্টল নগরে দেহ ত্যাগ করেন । আমি মনে করিলাম, যখন ব্রাঙ্মসমাজ ব্রজ্োপাস্নার জন্য সংস্থাপিত হইয়াছে, তখন ইহার সঙ্গে তত্ববোধিনী সভার যোগ দিলে আমাদের সংকল্প তো আরও অনায়াসে সিদ্ধ হইবে । এই মনে করিয়া আমি এক বুধবাঁরে সেই সমাজ দেখিতে যাই। আমি গিয়া দেখি যে, সূর্য্য অস্ত হইবার পুর্বে সমাজের পার্শ্গুহে একজন দ্রাবিড়ী ব্রাহ্মণ উপনিষ্ড পাঠ করিতেছেন, সেখানে কেবল রাম চন্দ্র বিদ্যাবাগীশ, ঈশ্বর চন্দ্র স্যায়রত্ব এবং আর ছুই তিন জন ব্রাক্ষণ উপবেশন করিয়া তাহা শ্রাবণ করিতেছেন | গন সেখানে যাইবার অধিকার নাই। 1. ু্ |
০
[ ২৬] রা
অস্ত হইলে রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ ও ঈশ্বর চন্দ্র ন্যায়রত্বু সমাজের ঘরে প্রকাশ্যে বেদীতে বসিলেন। এখানে ব্রাক্মণ শুদ্র. সকল জাঁতিরই সমান অধিকার ছিল। দেখিলাম, লৌকের মাগম অতি অল্প । বেদীর পূর্ববদিকে ফরাস চাদর পাতা, তাহাতে পাঁচ ছয় জন উপাসক বসিয়। রহিয়াছে । আর বেদীর পশ্চিম দিকে কয়েক খাঁনা চৌকী পাতা রহিয়াছে, তাহাতে ছুই চারি জন আগন্তক লোক । ঈশ্বরচন্দ্র স্যায়রত্ব উপনিব ব্যাখ্যা করিলেন এবং বিদ্যাবাগীশ মহাশয় বেদান্ত দর্শনের মীমাংসা বুঝাইতে লাগিলেন । বেদীর সম্মুখে কৃষ্ণ ও বিষু এই দুই ভাই মিলিয়া একন্বরে ব্রহ্মসঙ্গীত গান করিলেন। রাত্রি ৯টার সময় সভা ভঙ্গ হইল । আমি ইহা! দেখিয়া শুনিয়া ব্রাহ্ম সমাজের উন্নতির ভার গ্রহণ করিলাম এবং তত্তববোৌধিনী সভাকে তাহার সহিত সংযুক্ত করিয়। দিলাম । নিদ্ধারিত হইল, তত্ববোধিনী
সভা ব্রাঙ্ষপমাজের তত্বাবধান করিবে । সেই অবধি তত্ববোধিনী সভার মাসিক উপাসন। রহিত হইয়। তাহার পরিবর্তে প্রাতঃকালে
ব্রা্মসমাজের মাসিক উপাসনা ধার্য্য হইল এবং ২১ শে আশ্বিনের তত্ববোধিনীর সান্বসরিক সভ। পরিত্যাগ করিয়। ব্রাক্মষপমাজের গুহ প্রতিষ্ঠার দ্রিবস ১১ মাঁঘে সাম্বসরিক ব্রাহ্মসমাজ প্রবর্তিত হইল । ১৭৫০ শকের ভাদ্র মাসে যোড়ার্সীকস্থ কমল বস্থুর বাড়ী ভাড়া লইয়া তাহাতে প্রথম ত্রীক্গসমীজ সংস্থাপিত হয়, এবং এই ভাত্রমাসে তাহার যে সাম্মশুসরিক সমাজ হইত তাহা আমার ব্রাহ্মসমাজের সহিত যোগ হইবার পূর্বেবেই ১৭৫৫ শকে উঠিয়া গিয়াছিল। যখন আমর! ব্রাঙ্ষমাজ অধিকার করিলাম, তখন ইহার উন্নতির
জন্য এই চিন্তা হইল--সমাঁজে অধিক লোক কি প্রকারে হইবে ।
ক্রমে আমাদের যত্বে ঈশ্বরের প্রাসাদে লোক বাড়িতে লাগিল। তাহার সঙ্গে সঙ্গে ঘরও বাড়িতে লাগিল। ইহাঁতেই আমাদের কত উত্সাহ । প্রথমে ইহা ছুই তিন কুঠরীতে বিভক্ত ছিল, ক্রমে ওই
| ২৭ | সকল ভাঙ্গিয়া ফেলিয়া এই একটি প্রশস্ত ঘর নিশ্মিত হইয়াছে । যতই ঘর প্রশস্ত হইতে লাগিল, ততই লোকের সমাগম দেখিয়! মনে ঝরিলাম যে ব্রাহ্মধন্ম্নের উন্নতি হইতেছে । ইহাতে মনে কত আনন্দ।
সগ্তম পরিচ্ছেদ ।
এত সাঁধ্য সাধনার পর আমীর হৃদয়ে ঈশ্বরের ভাব যাহা কিছু আবিভূর্তি হইল, উপনিষদে দেখি তাহারই প্রতিধ্বনি । এবং উপনিষদের অর্থ আলোচনা করিয়া যাহা কিছু বুঝিতে পারি, দেখি তাঁহারই প্রতিধ্বনি আমার হৃদ্য়ে। অতএব উপনিষদের উপরে আমার প্রগাঢ় শ্রদ্ধা জন্মিল। আমার হাদয় বলিতেছে যে, তিনি আমার পিতা, পাতা, বন্ধু; উপনিষদে দেখি যে, তাহারই অনুবাঁদ_-“স নো বন্ধুর্জনিত স বিধাতা” । যদ্রি তাহাকে ন| পাই, তবে পুত্র, বিত্ত, মীন মধ্যাদা আমার নিকটে কিছুই নহে; পুত্র হইতে, বিস্ত হইতে, আর আর সকল হইতে, তিনি প্রিয়। ইহার অনুবাদ উপনিষদে দেখি, “তদেতশ প্রেযঃ পুত্রাণ প্রেয়োবিত্তাৎ প্রেয়োন্যম্মীৎ সর্ববস্মাৎ”। আমি ধনবান হইতে চাঁই না, মানবান হইতে চাঁই না, তবে আমি কি চাই? উপনিষদ বলিয়া দিলেন ষে, দরন্ষেত্যুপাসীত ব্রহ্মবান ভবতি” । যে ব্রশ্মাকে উপাসনা করে সে ্হ্মবান হয় । আমি বলিলাম, ঠিক, ঠিক্। ধনকে যে উপাসনা করে সে ধনবান হয়, মাঁনকে য়ে উপাসনা করে সে মাঁনবান হয়, ব্রক্মকে যে উপাসনা করে সে ব্রহ্মবান হয়, উপনিষদে যখন দেখি- লাম, “ষ আত্মদা বলদা” তখন আমার প্রীণের কথা পাইলাম । তিনি কেবল আমাদের প্রাণ দিয়াছেন তাহা নহে, তিনি আমাদের আত্মাও দিয়াছেন। তিনি কেবল আমাদের প্রীণের প্রাণ নেন, তিনি আমাদের আত্মারও আত্মা। তিনি আপনার আত্মা হইতে, আমাদ্দিগের আত্মাকে প্রসব করিয়াছেন । সেই এক ফ্রুব নিধিবকাঁর অনন্ত জ্ঞান-স্বরূপ পরমাত্া স্বরূপে নিত্য অবস্থিতি করিয়া অসংখ্য _ পরিমিত আত্মা-সকল স্ষ্টি করিয়াছেন। এই কথা আমি উপনিযুদে
| ২৯ 1
স্পষ্টই পাইলাম-_-“একং রূপং বুধা য£ঃ করোতি” যিনি এক রূপকে বনু প্রকার করেন। তাঁহাকে উপাসন। করিয়া তাহার ফল আমি তীহাকে পাই। তিনি আমার উপাস্য, আমি তাহার উপাঁসক; তিনি আমার প্রভু, আমি তাহার ভৃত্য, তিনি আমার পিতা, আমি তাহার পুত্র। এই ভাঁবই আমার নেতা । যাহাতে এই সত্য আমাদের ভারতবর্ষে প্রচার হয়--সকলে বাহাঁতে এই প্রকারে তাহার পুজা করে, তাহার মহিমা এইরূপেই যাহাতে সর্বত্র ঘোঁষিত হয়, আমার জীবনের লক্ষ্য তাহাই হইল । এই লক্ষ্য (স্তুসম্পন্ন করিবার জন্য একটি যন্ত্রালয়, একখানি পত্রিকা অতি আবশ্যক হইল।
আমি ভাবিলাম, তত্ববোধিনী সভার অনেক সভ্য কাঁধ্য দা পরস্পর বিচ্ছিন্নভাবে আছেন। তাহার সভার কোন সংবাঁদই পাঁন না, অনেক সময় উপস্থিত হইতেও পারেন না। সভায় কি হয়) অনেকেই তাহা অবগত নহেন। বিশেষতঃ ব্রাক্মসমাজে বিদ্যাবাগীশের ব্যাখ্যান অনেকেই শুনিতে পান না, তাহার প্রচার হওয়া আবশ্যক । আর, রাম মোহন রাঁয় জীবদশায় ব্রহ্মজ্ঞান বিস্তার উদ্দেশে ষে সকল গ্রন্থ প্রণয়ন করেন, তাহারও প্রচার আবশ্বাক। এতদ্যতীত যে সকল বিষয়ে লোকের জ্ঞান বৃদ্ধি ও চরিত্রে শোধনের সহায়তা করিতে পারে, এমন সকল বিষয়ও প্রকাশ হওয়া আবশ্থাক | আমি এইরূপ চিন্তা করিয়া! ১৭৬৫ শকে তত্ববোধিনী পত্রিকা প্রচারের সংকল্প করি। পত্রিকার একজন সম্পাদক নিয়োগ আবশ্যক । সভ্যদিগের মধ্যে অনেকেরই রচনা পরীক্ষা করিলাম । কিন্তু অক্ষয় কুমার দত্তের রচনা দেখিয়া আমি তাহাকে মনোনীত ৃ্ করিলাম। ভীহার এই রচনাতে গুণ ও দোষ ছুইই প্রত্যক্ষ করিয়া- ছিলাম।, গুণের কথা এই যে, তাহার, রচন! অতিশয় হৃদয়গ্রাহী ও ধর । আর দোষ এই যে, ইহাতে তিনি টা ুট-মডিত সমাচ্ছাদিত
[ ৩০ 7
দেহ তরুতলবাসী সন্গ্যাসীর প্রশংসা করিয়াছিলেন । কিন্তু চিহ্ুধারী বহিঃ